" কুন্তীদেবীর শিক্ষা " সুধি ভগবদ্ভক্তগণ কর্তৃক অতি সমাদৃত এই গ্রন্থ

কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কর্তৃক মূল সংস্কৃত শ্লোক, অনুবাদ এবং বিশদ তাৎপর্যসহ ইংরেজি Teachings of Queen Kunti গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ । অনুবাদক : শ্রীমদ্ সুভগ স্বামী মহারাজ

  • কমলদর্শন শ্রীকৃষ্ণ

    শ্লোক: ৫
    নমঃ পঙ্কজনাভায় নমঃ পঙ্কজমালিনে ।
    নমঃ পঙ্কজনেত্রায় নমস্তে পঙ্কজাঙ্ঘ্রয়ে ॥ ৫ ॥
  • অনুবাদ : হে পদ্মনাভ , হে পঙ্কজমালী , পঙ্কজনেত্র ও পঙ্কজাঙ্ঘ্রী , তোমাকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই । ( ভাঃ ১/৮/২২ )
  • তাৎপর্যঃ- অন্যান্য সকলের দেহ থেকে ভিন্ন প্রকার পরমেশ্বর ভগবানের চিন্ময় দেহের বিশেষ কিছু প্রতীক চিহ্নের এখানে বর্ণনা করা হয়েছে । ভগবৎ - দেহ এই সকল বিশেষ রূপ সমন্বিত । আমাদের একজনের মতো তিনি আবির্ভূত হলেও তার বিশেষ দৈহিক রূপের মাধ্যমে তিনি সর্বদাই পৃথক একজন সাধারণ নারী হওয়ায় , কুন্তীদেবী নিজেকে ভগবৎ - দর্শনের অযোগ্যা বলে বিবেচনা করেছেন । পরম সত্য ভগবানের দিব্য নাম , যশ , গুণ ও রূপাদি সম্পর্কিত তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করার মতো বুদ্ধি স্ত্রীলোক , শুদ্র ও দ্বিজবন্ধু অথবা উচ্চ বর্ণত্রয়ের অধম বংশধরদের নেই বলে দাবি করা হয় । উপরোক্ত স্ত্রীলোক , শুদ্র ও দ্বিজবন্ধু — এরা দিব্য ভগবৎ লীলায় প্রবেশে অযোগ্য হলেও পতিত আত্মাদের অহৈতুক কৃপা বিতরণার্থে অর্চাবিগ্রহরূপে জড় জগতে অবতীর্ণ ভগবানকে দর্শন করতে পারে । এই সব পতিত জীব জড়াতীত বস্তু দর্শনে অক্ষম হওয়ায় ভগবান গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুরূপে স্বেচ্ছায় অবতরণ করে অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ডের প্রত্যেকটিতে প্রবেশ করেন । তিনি কমলসদৃশ তার দিব্য নাভিদেশ থেকে এক পদ্মের সৃষ্টি করে , সেখানে ব্রহ্মাণ্ডের প্রথম জীব ব্রহ্মাকে সৃজন করেন । তাই ভগবানের আর এক নাম পঙ্কজনাভি । এই পঙ্কজনাভি ভগবান মনোময় , কাষ্ঠময় , মৃন্ময় , ধাতুময় , মণিময় , চিত্রপটময় , বালুকাময় বিভিন্ন উপাদানময় অৰ্চাবিগ্রহ ( তাঁর দিব্যরূপ ) গ্রহণ করেন । এই সকল শ্রীবিগ্রহ প্রতিনিয়ত কমলমালায় বিভূষিত । জড় তর্কে সর্বদা নিয়োজিত অভক্তদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য মন্দিরকক্ষে এক সুস্নিগ্ধ পবিত্র পরিবেশ রচনা করা কর্তব্য । ধ্যানযোগী মনোময় বিগ্রহের উপাসক । এইজন্য স্ত্রীলোক , শুদ্র ও দ্বিজবন্ধুরা স্বেচ্ছায় মন্দিরে গিয়ে এই সব বিভিন্ন বিগ্রহ - উপাসনায় আগ্রহী হলে ভগবান তাদেরও কৃপা করেন । স্বপ্ন বুদ্ধিসম্পন্ন অনেকেই তাদের পৌত্তলিক বলে অভিযোগ করলেও , এই সব মন্দির দর্শনকারীরা তা নয় । অল্পবুদ্ধিমানদের কৃপা বিতরণের জন্য সকল মহান আচার্যগণ সকল স্থানেই এই রকম মন্দির স্থাপন করেন । বস্তুত খ্ৰীলোক , শুদ্র বা তাদের অধম হয়ে নিজেকে শ্রীবিগ্রহ - উপাসনার অতীত বলে বর্ধমানন করা উচিত নয় । ভগবানের চরণকমল থেকে দর্শন শুরু করে , ক্রমশ উপরিভাগ উরু , কটি , বক্ষ , মুখারবিদের দর্শন করা কর্তব্য । ভগবানের চরণপদ্মের দর্শনে প্রথমে অভ্যস্ত না হয়েই তাঁর মুখারবিন্দ দর্শনে প্রয়াসী হওয়া উচিত নয় । পিতৃষ্বসা হওয়ায় কুন্তীদেবী চরণকমল থেকে ভগবৎ - দর্শন শুরু করেননি , কারণ ভগবান তার ফলে লজ্জা অনুভব করতে পারেন । এভাবে ভগবানকে এই দুঃখজনক অবস্থা থেকে রক্ষার্থে কুন্তীদেবী ভগবানের চরণকমলের ঠিক উপরিদেশ অর্থাৎ কটিদেশ থেকে দর্শন শুরু করে ক্রমশ উপরে তাঁর মুখারবিন্দ এবং তারপর নেমে তার চরণারবিন্দ দর্শন করেন । মোটামুটি সব কিছুই বিধিসম্মত হয় ।

       পদ্মফুল দেখামাত্র কৃষ্ণকে স্মরণ করা যায় । যেমন প্রিয় পুত্রের পোশাক , পাদুকা , খেলনাদি দর্শনে অচিরেই পুত্রের স্মরণ হয়– “ ওঃ , এগুলি আমার পুত্রের পাদুকা এগুলি আমার পুত্রের খেলনা এগুলি তার পোষাক । ” এই হচ্ছে ভালবাসার লক্ষণ । অতএব ভগবৎ - প্রেমী হলে , কৃষ্ণানুরাগী হলে , কৃষ্ণকে সর্বদাই স্মরণ করা যায় ।

       কৃষ্ণস্মরণ কঠিন নয় । এখানে কুন্তীদেবী পদ্মফুলের উল্লেখ করে কৃষ্ণের কর্ণনা করেন । সেই রকম কৃষ্ণ ভগবদ্‌গীতায় যখন নিজেকে বর্ণনা করেন , তখন তিনি বলেন , রসোঽহমঙ্গু কৌন্তেয়— তরল পদার্থের মধ্যে আমি রস । " এভাবে জলপানের মাধ্যমে কৃষ্ণকে স্মরণ করা যায় । এমন কি মদ্যপানকারী “ এই মদের স্বাদ হচ্ছে কৃষ্ণ , ” এইভাবে চিন্তা করতে করতে একদিন একজন মহান সাধুতে পরিণত হতে পারে । আমি এমন কি মদ্যপায়ীদেরও কৃষ্ণভাবনাময় হতে অনুরোধ করতে পারি , অন্যদের কথা তো বলাই বাহুল্য । কারণ স্বয়ং কৃষ্ণই বলেছেন , রসোঽহমঙ্গু কৌন্তেয়— “ আমিই তরল পদার্থের রস । " সাধারণভাবে এখানে তরল পদার্থকে জল বোঝান হয়েছে । কিন্তু মদ্যও তরল পদার্থ । এটি শুধু চিনি , গুড় আদি মিশ্রণকে গাঁজাইয়া তুলিয়া সেটিকে পাতন করা হয় মাত্র । অবশ্যই এটি খারাপ , কারণ তা উত্তেজক এক অর্থে কিছুই খারাপ নয় , মদ্য নিকৃষ্ট পদার্থ কারণ মদ্যপানের ফল খারাপ। আমেরিকায় বহু মদ্যপ আছে । ঐ দেশে এই রকম মদ্যপের অভাব নেই । কিন্তু এই মদ্যপদেরও আমি এই বলে অনুরোধ করতে পারি , মদ্যপানের সময় করে স্মরণ করবেন যে , মদের সরসতা হচ্ছে কৃষ্ণ। এভাবে কৃষ্ণানুশীলন শুরু করুন , তার ফলে একদিন আপনি একজন কৃষ্ণভক্ত সাধুতে পরিণত হবেন । ” তাই আমরা যদি ঐকান্তিকভাবে কৃষ্ণকে প্রাপ্ত হতে চাই , তা হলে যে কোন পরিস্থিতিতেই কৃষ্ণপ্রাপ্তি সম্ভব । ভগবদ্গীতায় ( ১০/১০ ) কৃষ্ণ বলেছেন—

    তেষাং সততযুক্তানাং ভজতাং প্রীতিপূর্বকম্ ।
    দদামি বুদ্ধিযোগং তং যেন মামুপযান্তি তে ॥

       “ যারা প্রতিনিয়ত আমার সেবায় নিয়োজিত এবং প্রীতিপূর্বক আমার উপাসনায় ব্রতী , তাদের আমি বুদ্ধিযোগ প্রদান করি যাতে তারা আমাকে প্রাপ্ত হয় । " যদি কেউ ঐকান্তিকভাবে কৃষ্ণানুসন্ধানে ব্রর্তী হয়, কৃষ্ণ সর্বত্রই বিরাজমান । “ অণ্ডান্তরস্থপরমাণুচয়ান্তরস্থং। গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ( ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৫ ) । কৃষ্ণ ব্রহ্মাণ্ডের ভিতর রয়েছেন , তিনি আমাদের হৃদয়াভ্যন্তরে আছেন এবং এমন কি পরমাণুর ভিতরও তিনি বিরাজমান । অতএব কৃষ্ণকে খুঁজে বের করা কঠিন নয় । কিন্তু এই কৃষ্ণান্বেষণের পন্থা আমাদের জানতে হবে । এই পন্থা অতি সরল এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আদেশে মুক্তহস্তে আমরা সকলকেই এই পথ প্রদর্শন করছি । ' হরেকৃষ্ণ ' কীর্তনই হচ্ছে এই পন্থা । ' হরেকৃষ্ণ ' কীর্তন করা মাত্রই কৃষ্ণ - উপলব্ধি হয় ।

       সেই রকম শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোকাবলী ভক্তিভরে শুধু শ্রবণ কীর্তনের মাধ্যমেই পবিত্র হওয়া যায় । জগতের সমুদয় আনই শ্রীমভাগবতে রয়েছে । সাহিত্য , কবিতা , জ্যোতির্বিজ্ঞান , দর্শন , ধর্ম ও ভগবৎ - প্রেম এই শাস্ত্রগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত । শ্রীমদ্ভাগবতম্ প্রমাণমলম্ । শুধু শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করেই সর্বোচ্চ শিক্ষা লাভ হয় , কারণ শ্রীমদ্ভাগবত অনুশীলনে প্রত্যেক বিষয়ে পারদর্শী হওয়া যায় । এমন কি একটি শব্দের অর্থ না জানলেও , তার শব্দতরঙ্গে এমনই শক্তি নিহিত আছে যে , শুধু এই শাত্মগ্রন্থের মন্ত্রোচ্চারণেই পবিত্র হওয়া যায় তা স্বঃ কৃষ্ণ পুণ্যভ্রণকীর্তনঃ পুণ্য শব্দের অর্থ সুকৃতি , প্রবণ অর্থে শুনা এবং কীর্তন অর্থে গুণগান করা । শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোক শ্রবণ ও কীর্তনকারী স্বভাবতই পুণ্যাত্মা হন । সাধারণত পুণ্যাত্মা হতে গেলে অনেক উদ্যমের প্রয়োজন , অথচ শুধু গীতা বা শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোকাবলী শ্রবণেই স্বাভাবিকভাবে পুণ্যাত্মা হওয়া যায় । এই জন্য কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের প্রতিটি মন্দিরের একটি কঠোরভাবে পালনীয় বিধি হচ্ছে যে , ঐ শাস্ত্র শ্রবণ - কীর্তনের জন্য দৈনিক পাঠের ব্যবস্থা করা । আমাদের এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পারমার্থিক নেতা তৈরি করা , কিন্তু হরিকথা শ্রবণ কীর্তন ছাড়া নেতা হওয়া অসম্ভব । জড় জগতের নেতা হওয়া সম্ভব হতে পারে , কিন্তু পারমার্থিক রাজ্যে তা সম্ভব নয় ।

    মালী হঞ্চা সেই বীজ করে আরোপণ ।
    শ্রবণ-কীর্তন-জলে করয়ে সেচন।।

       ভক্তিবীজে শ্রবণ - কীর্তনরূপ জল সেচন করা হয় , যার ফলে আমাদের আদি ভাবনা অর্থাৎ কৃষ্ণভাবনার উন্মেষ হয় ।

       অতএব এই বন্দনার মাধ্যমে মহাভাগবত কুন্তীদেবী শুধু পদ্মফুলে আমাদের মনকে একাগ্র করে কৃষ্ণভাবনাময় হওয়ার আমাদের এক সুযোগ দিচ্ছে । মানে ' কাদা ' এবং জ মানে ' উৎপন্ন ' পদ্মফুলের জন্ম কাল থেকে হলেও , এটি একটি বিশিষ্ট যুল , এবং ফুলটি কৃষ্ণের অতীব প্রিয় । তাই শ্রীকৃষ্ণের সকল শ্রীঅঙ্গ বর্ণনায় কুন্তীদেবী পদ্মফুলের উল্লেখ করেছেন , যার ফলে পদ্মফুলের দর্শন মাত্র কৃষ্ণভাকনার উন্মেষ হবে— “ ওঃ , কৃষ্ণের নাভি হচ্ছে পদ্মের মতো । এই নাভি থেকে যে পদ্মের সৃষ্টি হয় , সেই পথেই ব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা ব্রহ্মার জন্ম হয়েছে । এই ব্ৰহ্মাণ্ডে কত গ্রহমণ্ডল , সমুদ্র , পর্বতমালা ও যানবাহনাদি সহ শহর রয়েছে , অথচ এই সময় ব্রহ্মাণ্ডের উৎস হচ্ছে ঐ পদ্ম । "

       নমঃ পঙ্কজমালিনে । সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের বীজ বহনকারী অদ্ভুত পদ্মফুলের উৎস হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ । কিন্তু তিনি ঐ রকম একটি মাত্র ফুলেরই উৎস নন । শ্রীকৃষ্ণঃ এত দীন - হীন নন যে , শুধু একটি মাত্র পদ্মফুল সৃষ্টি করেই কাজ শেষ করেন । না ঠিক অনেক ফুলের সমন্বয়ে তৈরি মালার মতো অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের উৎস হচ্ছেন কৃষ্ণ । এই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড এক বিশাল অরবিন্দমালার সঙ্গে তুলনীয় । এই হচ্ছেন ভগবান । যস্যৈক নিশ্বসিতকালমথাবলম্বা । জীবন্তি লোমবিলোজা ( সংহিতা ৫/৪৮ ) । কৃষ্ণ হচ্ছেন অনন্ত । আমরা এই একটি গ্রহ নিয়ে অতিশয় ব্যস্ত ও উদ্বিগ্ন , কিন্তু অনন্ত গ্রহলোক নিয়ে কৃষ্ণের সৃষ্টি । আমাদের গণনাতীত কেশরাশির মতো গ্রহমণ্ডলের সংখ্যাও আমরা নিরূপণ করতে পারি না । এই হচ্ছে কৃষ্ণের সৃষ্টির প্রকৃতি । আর একটি উদাহরণ হচ্ছে একটি গাছে অসংখ্য পাতা আছে । সেই রকম অসংখ্য গ্রহলোক আছে, অনন্ত ব্ৰহ্মাণ্ড আছে। তাই কৃষ্ণও অনন্ত।

       কৃষ্ণের নাভিদেশ কমলসদৃশ , কৃষ্ণ অরবিন্দমালা সুশোভিত কৃষ্ণের চক্ষুদ্বয়ও অরবিন্দ দলের সঙ্গে তুলনীয় । আলোলচন্দ্রক লসদবনমাল্যবংশী ( ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩১ ) । অতএব আমরা শুধু এই একটি শ্লোকের মাধ্যমে কৃষ্ণ - স্মরণ করতে পারি । এই শ্লোকে কৃষ্ণের শ্রীঅঙ্গ বর্ণনায় পদ্মফুলের উল্লেখ করা হয়েছে । এইভাবে সারা জীবন আমরা কৃষ্ণের অপরূপ সৌন্দর্য , কৃষ্ণের জ্ঞান , কৃষ্ণ কিভাবে সৃষ্টি প্রকাশ করেন ইত্যাদি ধ্যান করতে পারি । এই হচ্ছে ধ্যান— কৃষ্ণের স্মরণ । ধ্যানাবস্থিতদ্‌গতেন মনসা পশ্যন্তি যং যোগিনঃ । সর্বদা কৃষ্ণের স্মরণকারীই হচ্ছেন যোগী ।

       যারা নির্বিশেষ কিছু চিন্তা করে , তারা যোগী নয় । তাদের ধ্যান শুধু ক্লেশই বৃদ্ধি করে ক্লেশোঽধিকতরক্তেষামব্যক্তাসক্তচেতযাম্ । তারা বস্তুত কিছুই লাভ করে না । তাই ধ্যানের পর তারা বলে , “ আচ্ছা , এখন আমায় ধূমপান করতে দাও । এখন আমার গলা শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে । আমায় একটি সিগারেট দাও । ” এগুলি ধ্যান নয় । ধ্যান হচ্ছে সর্বদা কৃষ্ণভাবনা ( সততং চিন্তয়ত্তো মাম্ ) এবং দৃঢ়ব্রত হয়ে কৃষ্ণভাবনায় উন্নতিতে প্রয়াসী হওয়া ( যতন্তশ্চ দৃঢ়তাঃ ) ।

       আমাদের পবিত্র হতে হবে । পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্ । কৃষ্ণ পবিত্র , তাই অপবিত্রভাবে আমরা কৃষ্ণের শরণাপন্ন হতে পারি না । কিন্তু আমরা যদি সর্বদা কৃষ্ণস্মরণ করি ও কৃষ্ণধ্যান করি , তা হলে আমরা পবিত্র হব । পুণ্যশ্রবণকীর্তনঃ । সেই কৃষ্ণধ্যান শ্রবণ ও কীর্তনের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব । তারপর স্বাভাবিকভাবেই কৃষ্ণ - স্মরণ হবে । এই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনার পন্থা । শ্রবণং কীর্তনং বিষ্ণোঃ স্মরণম্ । স্মরণম্ শব্দে ‘ অনুচিন্তন’ । শ্রবণ ও কীর্তন করলে আপনা হতেই স্মরণ হবে । তখন আমরা ( সেবনম্ ) কৃষ্ণচরণ উপাসনায় ব্রতী হব । তারপর আমরা মন্দির - উপাসনায় ( অর্চনম্ ) ও বন্দনায় ( বন্দনম্ ) নিয়োজিত হব । আমরা কৃষ্ণের সেবকরূপে ( দাস্যম ) নিজেরা নিযুক্ত হব । আমরা কৃষ্ণের সখা ( সখ্যম্ ) হব ; এবং আমরা সর্বস্ব কৃষ্ণচরণে সমর্পণ ( আত্মনিবেদনম্ ) করব । এই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃতের পন্থা ।

  • এখন দেখতে পারেন => " কুন্তীদেবীর শিক্ষা " গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৬ ) ইন্দ্রিয়ের অধীশ্বর : হৃষীকেশ –
  • * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।