শ্রীমদ্ভাগবতের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
শ্লোক: 121
আচার্যং মাং বিজানীয়ান্নাবমন্যেত কর্হিচিৎ ।
ন মর্ত্যবুদ্ধ্যাসূয়েত সর্বদেবময়ো গুরুঃ ।।
(ভাগবত ১১/১৭/২৭)
অনুবাদঃ- আচার্যকে আমার থেকে অভিন্ন বলে মনে করা উচিত এবং কখনও কোনভাবে তাঁকে অশ্রদ্ধা করা উচিত নয়। তাঁকে একজন সাধারণ মানুষ বলে মনে করে তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হওয়া উচিত নয়, কেন না তাঁর মধ্যে সমস্ত দেবতার অধিষ্ঠান আছে।
শ্লোক: 122
ত্বং নঃ সন্দর্শিতো ধাত্রা দুস্তরং নিস্তিতীর্ষতাম্ ।
কলিং সত্ত্বহরং পুংসাং কর্ণধার ইবার্ণবম্ ।।
(ভাগবত ১/১/২২)
অনুবাদঃ- আমরা মানুষের সদ্ গুণ অপহরণকারী কলিকালরূপ দুর্লঙ্ঘ্য সমুদ্র উত্তীর্ণ হতে ইচ্ছুক। সমুদ্রের পরপারে গমন করতে ইচ্ছুক মানুষের কাছে কর্ণধার সদৃশ আপনাকে বিধাতাই আমাদের কাছে পাঠিয়ে আপনার দর্শন লাভ ঘটিয়েছেন ।
(সূত গোস্বামীর প্রতি মুনি-ঋষিরা)
শ্লোক: 123
তরবঃ কিং ন জীবন্তি ভস্ত্রাঃ কিং ন শ্বসন্ত্ত্যত ।
ন খাদন্তি ন মেহন্তি কিং গ্রামে পশবোহপরে ।।
(ভাগবত ২/৩/১৮)
অনুবাদঃ-
বৃক্ষসমূহ কি বেঁচে থাকে না? কামারের হাপর কি শ্বাসগ্রহণ ও পরিত্যাগ করে না? আমাদের চতুর্দিকে পশুরা কি আহার ও স্ত্রীসম্ভোগ করে না?
(শ্রীল শুকদেব গোস্বামী)
শ্লোক: 124
নায়ং দেহো দেহভাজং নৃলোকে
কষ্টান্ কামানর্হতে বিড়্ ভুজাং যে।
তপো দিব্যং পুত্রকা যেন সত্ত্বং
শুদ্ধ্যেদ্ যস্মাদ্ ব্রহ্মসৌখ্যং ত্বনন্তম্ ।।
(ভাগবত ৫/৫/১)
অনুবাদঃ- হে পুত্রগণ ! এই জগতে দেহধারী প্রাণীদের মধ্যে এই নরদেহ লাভ করে, কেবল ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের জন্য দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করা উচিত নয়। ওই প্রকার ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ বিষ্ঠাভোজী কুকুর এবং শূকরদেরও লাভ হয়ে থাকে। ভগবৎ সেবাপর অপ্রাকৃত তপস্যা করাই উচিত, কারণ তার ফলে হৃদয় নির্মল হয় এবং হৃদয় নির্মল হলে জড় সুখের অতীত অন্তহীন চিন্ময় আনন্দ লাভ হয়।
শ্লোক: 125
কৌমার আচরেৎ প্রাজ্ঞো ধর্মান্ ভাগবতানিহ ।
দুর্লভং মানুষং জন্ম তদপ্যধ্রুবমর্থদম্ ।।
(ভাগবত ৭/৬/১)
অনুবাদঃ- প্রাজ্ঞ ব্যক্তি মনুষ্যজন্ম লাভ করে জীবনের শুরু থেকেই, অর্থাৎ বাল্যকাল থেকেই অন্য সমস্ত প্রয়াস ত্যাগ করে ভাগবত-ধর্ম অনুষ্ঠান করবেন। মনুষ্যজন্ম অত্যন্ত দুর্লভ এবং অন্যান্য শরীরের মতো অনিত্য হলেও তা অত্যন্ত অর্থপূর্ণ, কারণ মনুষ্য-জীবনে ভগবানের সেবা সম্পাদন করা সম্ভব। নিষ্ঠাপূর্বক কিঞ্চিৎ মাত্র ভগবদ্ভক্তির অনুষ্ঠান করলেও মানুষ পূর্ণসিদ্ধি লাভ করতে পারে।
(প্রহ্লাদ মহারাজ)
শ্লোক: 126
তস্যারবিন্দনয়নস্য পদারবিন্দ-
কিঞ্জল্কমিশ্রিতুলসীমকরন্দবায়ুঃ ।
অন্তর্গতঃ স্ববিবরেণ চকার তেষাং
সংক্ষোভমক্ষরজুষামপি চিত্ততন্বোঃ ।।
(ভাগবত ৩/১৫/৪৩)
অনুবাদঃ- সেই অরবিন্দ নেত্র ভগবানের পদকমলের কিঞ্জল্ক মিশ্রিত তুলসীর মধুর সৌরভযুক্ত বায়ু নির্বিশেষ ব্রহ্মপরায়ণ চতুঃসনের নাসিকার রন্ধ্রযোগে অন্তর্গত হয়ে, তাঁদের চিত্ত ও তনুর ক্ষোভ উৎপন্ন করেছিল।
শ্লোক: 127
যেহন্যেহরবিন্দাক্ষ বিমুক্তমানিন-
স্ত্বয্যস্তভাবাদবিশুদ্ধবুদ্ধয়ঃ ।
আরুহ্য কৃচ্ছ্রেণ পরং পদং ততঃ
পতন্ত্যধোহনাদৃতযুষ্মদঙ্ঘ্রয়ঃ ।।
(ভাগবত ১০/২/৩২)
অনুবাদঃ- হে অরবিন্দাক্ষ ! যারা ‘বিমুক্ত হয়েছে’ বলে অভিমান করে, আপনার প্রতি ভক্তিবিহীন হওয়ায় তাদের বুদ্ধি অবিশুদ্ধ। তারা বহু কৃচ্ছ্রসাধন করে মায়াতীত পরমানন্দ ব্রহ্ম পর্যন্ত আরোহণ করে। ভগবদ্ভক্তির অনাদর করার ফলে তারা আবার অধঃপতিত হয়।
শ্লোক: 128
যথোল্মুকাদ্বিস্ফুলিঙ্গাদ্ধুমাদ্বাপি স্বসম্ভবাৎ ।
অপ্যাত্মত্বেনাভিমতাদযথাগ্নিঃ পৃথগুল্মুকাৎ ।।
(ভাগবত ৩/২৮/৪০)
অনুবাদঃ- জ্বলন্ত অগ্নি যেমন অগ্নিশিখা থেকে, স্ফুলিঙ্গ থেকে এবং ধুম থেকে ভিন্ন, যদিও তারা সকলেই জ্বলন্ত কাষ্ঠ থেকে উদ্ভূত হওয়ার ফলে, পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
শ্লোক: 129
এবং প্রজাভির্দুষ্টাভিরাকীর্ণে ক্ষিতিমণ্ডলে ।
ব্রহ্মবিটক্ষত্রশূদ্রাণাং যো বলী ভবিতা নৃপঃ ।।
(ভাগবত ১২/২/৭)
অনুবাদঃ- এভাবেই ভূমণ্ডল যখন দুষ্ট জনগণে পূর্ণ হবে, তখন ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, ক্ষত্রিয় ও শূদ্রদের মধ্যে যাদের জোর বেশি, তারাই রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করবে।
শ্লোক: 130
দস্যুপ্রায়েষু রাজসু
(ভাগবত ১২/২/১৩)
অনুবাদঃ- রাজাগণ প্রায় দস্যুর মতো হয়ে যাবেন।
(শুকদেব গোস্বামী)
শ্লোক: 131
প্রজা হি লুব্ধৈরাজন্যৈর্নিঘৃণৈর্দস্যুধর্মভিঃ ।
আচ্ছিন্নদারদ্রবিণা যাস্যন্তি গিরিকাননম্ ।।
(ভাগবত ১২/২/৮)
অনুবাদঃ- ঐ সকল দস্যুপ্রায় লোভী ও নির্মম রাজাদের হাতে তাদের সম্পত্তি, স্ত্রী প্রভৃতি হারিয়ে প্রজাগণ গিরিকাননে চলে যাবে।
শ্লোক: 132
শাকমূলামিষক্ষৌদ্রফলপুষ্পার্ষ্টিভোজনাঃ ।
অনাবৃষ্ট্যা বিনঙ্ক্ষ্যন্তি দুর্ভিক্ষকরপীড়িতাঃ ।।
(ভাগবত ১২/২/৯)
অনুবাদঃ- দুর্ভিক্ষ ও অত্যাধিক করের দ্বারা উৎপীড়িত হয়ে জনসাধারণ শাক, মূল, আমিষ, বনের মধু, ফল, ফুল ও বীজ ভক্ষণ করবে এবং অনাবৃষ্টির ফলে তারা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস-প্রাপ্ত হবে।
শ্লোক: 133
তচ্ছ্রদ্দধানা মুনয়ো জ্ঞানবৈরাগ্যযুক্তয়া ।
পশ্যন্ত্যাত্মনি চাত্মানং ভক্ত্যা শ্রুতগৃহীতয়া ।।
(ভাগবত ১/২/১২)
অনুবাদঃ- অপ্রাকৃত বস্তুতে সুদৃঢ় ও নিশ্চয় বিশ্বাসযুক্ত মুনিগণ জ্ঞান ও বৈরাগ্যযুক্ত হয়ে শাস্ত্র শ্রবণজনিত উপলব্ধি অনুসারে ভগবানের প্রতি প্রেমময়ী সেবার দ্বারা তাঁদের শুদ্ধ হৃদয়ে পরমাত্মারূপে সেই তত্ত্ববস্তুকে দর্শন করেন।
শ্লোক: 134
শ্রুতিঃ প্রত্যক্ষমৈতিহ্যমনুমানং চতুষ্টয়ম্ ।
প্রমাণেষ্বনবস্থানাদ্ বিকল্পাৎ স বিরজ্যতে ।।
(ভাগবত ১১/১৯/১৭)
অনুবাদঃ- শ্রুতি, প্রত্যক্ষ, ঐতিহ্য ও অনুমান—এই চার প্রকার প্রমাণের ভিত্তিতে মানুষ এই জড় জগতের অস্থায়ী অসারত্ব উপলব্ধি করতে পারে এবং এর দ্বারা সে এই জড় জগতের প্রতি বিরাগ বোধ করে।
(উদ্ধবের প্রতি শ্রীকৃষ্ণ)
শ্লোক: 135
বরীয়ানেষ তে প্রশ্নঃ কৃতো লোকহিতং নৃপ ।
আত্মবিৎসম্মতঃ পুংসাং শ্রোতব্যাদিষু যঃ পরঃ ।।
(ভাগবত ২/১/১)
অনুবাদঃ- হে রাজন্ ! আপনার প্রশ্ন যর্থার্থই মহিমান্বিত, কেন না তা সমস্ত মানুষের পরম হিতকর। এই বিষয়টি সমস্ত শ্রবণীয় বিষয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম এবং আত্মতত্ত্বজ্ঞ মুক্তকুল কর্তৃক অনুমোদিত।
(শ্রীল শুকদেব গোস্বামী)
(সূত্রঃ- বৈষ্ণব শ্লোকাবলী) এরপর দেখুন=
শ্রীমদ্ভাগবতের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক
আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে পারেন। মানসম্মত লেখা নামসহ সাইটে স্থায়ীভাবে পাবলিশ করা হয়।