ভক্তসঙ্গে তীর্থ দর্শন, পূণ্যভূমী- তীর্থক্ষেত্র , গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্রের মহিমা ও এসংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ।

গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র গুলো কোথায় কোথায় অবস্থিত, সেখানে কীভাবে যাবেন? তীর্থক্ষেত্র দর্শনে যেয়ে কোথায় থাকবেন, কি খাবেন ইত্যাদি বিষয়ে ভগবদ্ভক্তদের বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ।

  • শ্রীনৃসিংহ তীর্থ

    অন্তর্বেদী

    নন্দগোপাল দাস

    অন্ধ্রপ্রদেশে বত্রিশটি প্রসিদ্ধ নরসিংহ ক্ষেত্র রয়েছে এবং এই নরসিংহ ক্ষেত্রের বিভিন্ন স্থানে ১০৮ টি নরসিংহদেব বিগ্রহ ছড়িয়ে রয়েছে । অন্ধ্রপ্রদেশের এই নরসিংহ ক্ষেত্রগুলির মধ্যে ' অন্তর্বেদী ' এক অন্যতম নরসিংহ ক্ষেত্র এবং এখানকার নরসিংহ স্বামী বিগ্রহ মহিমা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য । অন্ধ্রপ্রদেশের পশ্চিম গোদাবরী জেলার গোদাবরী নদীর সাতটি শাখার অন্যতম বশিষ্ঠ গোদাবরী নদী ও বঙ্গোপসাগরের সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এই পুণ্যতীর্থ অন্তর্বেদী গ্রাম। সখীনেতিপল্লী মণ্ডল ও নর্সাপুর থেকে এই অন্তর্বেদী গ্রামের দূরত্ব যথাক্রমে ১৫ ও ১০ কিলোমিটার । কথিত আছে বশিষ্ঠ মুনির দ্বারা গোদাবরী নদীর এই শাখা এখানে আনীত হয়েছিল তাই এই শাখা নদীটির নাম বশিষ্ঠ গোদাবরী। সমগ্র গোদাবরী ব - দ্বীপ অঞ্চলে গোদাবরীর সাতটি শাখা নদীতে যে সাতটি পুণ্য স্নান ক্ষেত্র রয়েছে , তার মধ্যে অন্তর্বেদীর স্নান ক্ষেত্রটিকে অন্যতম পবিত্র স্নান ক্ষেত্র রূপে গণ্য করা হয় । এই স্থানের পবিত্র প্রকৃতির জন্য অন্তর্বেদীকে ' দক্ষিণা কাশী ' নামেও অভিহিত করা হয় । আবার , গোদাবরীর সাতটি শাখাই এই অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে এসে মিলিত হয়েছে বলে এই অঞ্চলটিকে ' সপ্ত সাগর সঙ্গম প্রদেশম'ও বলা হয়ে থাকে ।

        এই অন্তর্বেদীতেই রয়েছে সুপ্রাচীন ‘ শ্রীলক্ষ্মী - নরসিংহ স্বামী মন্দির । বর্তমান মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল খ্রিষ্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দী ও ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে । বশিষ্ঠ গোদাবরী নদীর তীরেই এই মন্দিরটি অবস্থিত । এই শ্রীলক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দিরের একটি বৈশিষ্ট্য হল— এই মন্দিরের বিগ্রহের মুখ পূর্বমুখী হওয়ার পরিবর্তে পশ্চিমমুখী । এই মন্দিরের তোড়ণ দ্বার বা মন্দির চত্বরের প্রবেশের প্রধান দ্বার ‘ গোপুরমটি পাঁচতলা বিশিষ্ট মন্দিরের প্রধান বিগ্রহ শ্রীনৃসিংহদেব ছাড়াও সেখানে রয়েছেন ব্রহ্মা , বিষ্ণু ও মহেশ্বরের বিগ্রহ । কথিত আছে ব্রহ্মা এখানে ' রুদ্র যজ্ঞ ' নামক এক বৈদিক তপশ্চর্যা সম্পাদনের মাধ্যমে এই স্থানটিকে পবিত্র করেছিলেন । সেই থেকে এই জায়গাটির নাম ' অন্তর্বেদী । এখানে এই শ্রীলক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দিরের কাছাকাছি যে প্রাচীন মন্দিরসমূহ রয়েছে , সেগুলি হল , নীলকণ্ঠেশ্বর , শ্রীরাম ও অঞ্জনেয় মন্দির । অন্তর্বেদীর স্থান মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য বিষয়ক কাহিনীটি । এরকম—

        বশিষ্ঠ মুনি গোদাবরী নদীর গৌতমী শাখাকে সাগরে মেলাবার পরে সেই মোহনার নিকটেই তাঁর আশ্রম প্রতিষ্ঠা করলেন । ব্রহ্মা ভগবান শঙ্করের বিরুদ্ধে অপরাধ করার ফল স্বরূপ পাপ হতে মুক্ত হবার জন্য রুদ্র - যজ্ঞ সম্পাদন করে শ্রীনীলকণ্ঠেশ্বরকে এই স্থানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । যেহেতু এই স্থানে ব্রহ্মার রুদ্র যজ্ঞের যজ্ঞ বেদী নির্মিত হয়েছিল , সেই থেকে এই জায়গাটি সকলের কাছে পবিত্র ' অন্তর্বেদী ' নামে পরিচিত হল ।

        এই স্থানেই বশিষ্ঠ গোদাবরী নদীর তীরে হিরণ্যাক্ষের পুত্র রক্তবিলোচন দীর্ঘ দশ হাজার বৎসর কঠোর তপস্যা করে শিবকে সন্তুষ্ট করে তাঁর কৃপা লাভ করেছিল । রক্তবিলোচনের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব তার সামনে আবির্ভূত হয়ে রক্তবিলোচন যা প্রার্থনা করবে তিনি তাই মঞ্জুর করবেন বলে কথা দিলেন । শিবের উদারতার সুযোগে রক্তবিলোচন এক অদ্ভূত বর চাইল । রক্তবিলোচন এই বর চাইল যে যদি কখনও যুদ্ধক্ষেত্রে তার শরীর থেকে রক্তপাত হয় , তাহলে তার রক্তপাতের ফলে যত সংখ্যক ধুলি কণা ভিজে উঠবে , ভূমি থেকে যেন তৎক্ষণাৎ ততসংখ্যক তারই মতই শক্তিশালী রাক্ষস উৎপন্ন হয়ে তার সঙ্গে সহযোগিতা করে এবং সকল শত্রুদের নিহত করার পর সেইসব দানবেরা যেন তার সঙ্গে এক হয়ে যায় । ভগবান শঙ্কর রক্তবিলোচনের এই ধরনের অদ্ভুত প্রার্থনা বা আকাঙ্খা শুনে বিস্মিত হয়েছিলেন , কিন্তু যেহেতু তিনি রক্তবিলোচনের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে , তার ইচ্ছা অনুযায়ী বর প্রদানের কথা দিয়েছিলেন , তাই শিব সেই প্রার্থনা অনুমোদন করলেন । শিবের বর প্রাপ্ত হওয়ার পর রক্তবিলোচন ব্রাহ্মণ , দেবতা , সাধু ও গাভীদের উপর অত্যাচার শুরু করল । সে যাগ যজ্ঞ , বৈদিক আচার অনুষ্ঠা সমূহে বাধা প্রদান করতে লাগলো ।

        এই সময়ে বিশ্বামিত্র মুনি বশিষ্ঠ মুনির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা গ্রহণের সুযোগ লাভ করে , রক্তবিলোচনকে বশিষ্ঠ মুনির অনুপস্থিতিতে বশিষ্ঠ মুনির একশত পুত্রকে হত্যার জন্য প্ররোচিত করলেন । দানব রক্তবিলোচন বিশ্বামিত্র মুনির কথা অনুযায়ী বশিষ্ঠ মুনির একশত পুত্রকে হত্যা করে বশিষ্ঠ মুনি ও তাঁর পত্নী অরুন্ধতীর অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হল বশিষ্ঠ মুনি সেই সময়ে ব্রহ্মলোকে ছিলেন । বশিষ্ঠ মুনির পত্নী অরুন্ধতী শত পুত্রের মৃত্যুতে নিদারুন ক্রন্দন করতে করতে বশিষ্ঠ মুনির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানাতে লাগলেন । বশিষ্ঠ মুনি দিব্য দৃষ্টিতে পৃথিবীতে তাঁর আশ্রমে কি ঘটছে তা দেখতে পেয়ে আশ্রমে ফিরে এসে ধ্বংসন্মুখ দানব রক্তবিলোচনকে প্রতিহত করার জন্য শ্রীনৃসিংহদেবের উদ্দেশে অনবরত প্রার্থনা করতে লাগলেন , এই বলে—

        প্রহ্লাদ বরদং বিষ্ণুং নৃসিংহং পরদিবতম্ ।
    শরণং সর্বলোকানামাপন্নরতি নিবারনম্ ॥

        তখন , তাঁর ভক্তগণকে রক্ষার জন্য বাহন গরুড়ের পৃষ্ঠে আরোহন করে ভগবান নৃসিংহদেব শ্রীলক্ষ্মীদেবীসহ বশিষ্ঠ মুনির সামনে আবির্ভূত হলেন । করজোড়ে শ্রীনৃসিংহদেবের মহিমা কীর্তন করার পর , বশিষ্ঠ মুনি তাঁর কাছে দানব রক্তবিলোচনের সাধুগণের প্রতি ঔদ্ধত্য ও অত্যাচার এবং তার নিজ শত পুত্রকে হত্যার নিষ্ঠুরতার বর্ণনা প্রদান করলেন । বশিষ্ঠ মুনি শ্রীনৃসিংহদেবের কাছে এই প্রার্থনাও করলেন যে অসুর নিধনের পর ভগবান নৃসিংহদেব যেন তার আশ্রমে অধিষ্ঠিত হন যাতে বশিষ্ঠ মুনি সর্বদা সেখানে তাঁর আরাধনা করতে পারেন । শ্রীনৃসিংহদেব সম্মতি হলেন ।

        অতঃপর ভগবান নরহরি তাঁর পাঞ্চজন্য শঙ্খ ধ্বনিত করে দানব রক্তবিলোচনকে যুদ্ধে আহ্বান করলেন । রক্তবিলোচন পাঞ্চজন্য শঙ্খের সেই ভয়ঙ্কর ধ্বনি শ্রবণ করে ঝড়ের বেগে ভগবানের দিকে ধাবিত হয়ে চারদিক থেকে তাঁকে ঘিরে ফেলে যুদ্ধাস্ত্রে আচ্ছন্ন করল। রক্তবিলোচন সমস্ত রকমের অস্ত্র ভগবান নৃসিংহদেবকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করতে লাগলো । কিন্তু ভগবান নৃসিংহদেব কেবলমাত্র একটি অস্ত্র , সুদর্শন চক্র দিয়ে সমস্ত অস্ত্র ও আক্রমণ চূর্ণ করছিলেন । এইভাবে যুদ্ধ করতে করতে একসময় রক্তবিলোচনের শরীর আঘাতপ্রাপ্ত হলে , সেই আঘাতের স্থান থেকে রক্তপাত হয়ে মাটি ভিজে উঠল । রক্তে মাটি ভিজে উঠতেই শিবের বর অনুসারে যত ধুলিকণা রক্তে ভিজেছিল তত ধুলিকণা সংখ্যক রক্তবিলোচনের সমান শক্তিশালী দানব উৎপন্ন হল ।

        এইসব দানবেরা উৎপন্ন হয়েই শ্রীনৃসিংহদেবের বাহন গরুড়কে আঘাত করতে উদ্যত হল । কিন্তু গরুড় তাদের সেই আক্রমণ প্রতিহত করে এমনভাবে তাদের পাল্টা আক্রমণ করলেন যে তারা তা সহ্য করতে পারল না । এই ঘটনা দর্শন করে দানব রক্তবিলোচন একের পর এক অস্ত্র গরুড়কে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করতে লাগলো । কিন্তু তার কোন অস্ত্রই গরুড়কে আঘাত করতে পারল না , কেননা সেই সব অস্ত্র গরুড়ের কাছে পৌঁছবার আগেই ভগবান নরহরি তাঁর সুদর্শন চক্রের দ্বারা তা খণ্ডন করছিলেন ।

        অবশেষে রক্তবিলোচনের রক্ত যাতে মাটিতে না পড়ে সেই ব্যবস্থা করার জন্য ভগবান মায়া শক্তির প্রকাশ ঘটালেন এবং সুদর্শন চক্র দ্বারা দানব রক্তবিলোচনের দুই বাহু প্রথমে ছেদন করে অন্যান্য অসুর যোদ্ধাসহ তাকে বধ করলেন । রক্তবিলোচন নিহত হবার পর মায়াশক্তি যত রক্তকে ধরে রেখেছিল , তা এখন মুক্ত করে দিতেই সেখানে এক রক্তাভ নদীর সৃষ্টি হল , যা ' রক্তকুল্য ' নামে পরিচিত । এই নদী , এমনকি দেবতা বা দানব কেউই পার হতে পারত না ।

        রক্তবিলোচন সহ দানবকুলকে বধ করার পর ভগবান নৃসিংহদেব যে স্থানে তাঁর চক্রকে ধৌত করেছিলেন , সেই স্থানটি আজও চক্ৰতীর্থম নামে পরিচিত । ঐ স্থানে ডুব দিয়ে স্নান করলে সকল পাপ ধৌত হয় বলে কথিত আছে । অন্তর্বেদীতে পাঁচটি পবিত্র স্নানক্ষেত্র রয়েছে— সমুদ্র , সাগর সঙ্গম , বশিষ্ঠ গোদাবরী নদী , রক্তকুল্য নদী এবং চক্রতীর্থম।

        জয়ের আনন্দে বশিষ্ঠ মুনি শ্রীনৃসিংহদেবের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করলেন অন্তর্বেদীতে । স্বর্গের সকল দেবতারা সেখানে এসে ভগবানের মহিমা কীর্তন করতে লাগলেন । ভগবান নৃসিংহদেব তখন ভবিষ্যতে অন্তর্বেদীর বিগ্রহের তাৎপর্য ও মহিমা কি হবে সে বিষয়ে বর্ণনা করলেন । ভগবান বর্ণনা করলেন যে অন্তর্বেদী হবে পরম মুক্তিলাভের সহজ উপায় ।

        পরবর্তীকালে এই কলিযুগে অন্তর্বেদী এক জঙ্গলে পরিণত হয় এবং শ্রীলক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী বিগ্রহের স্থানটি হারিয়ে যায় । কেশবদাস নামক এক রাখাল এই স্থানে ও আশেপাশে গো - চারণ করাতে আসতো । একদিন সে দেখতে পেল তার এক লালচে খয়েরী রঙের গাভী গাছ - গাছালির ঝোপের মধ্যে থাকা একটি উই - ঢিপির উপরে দুধ বর্ষণ করছে । গাভীটি দুধ নিঃশেষ করে ঘরে ফিরে আসছে । গৃহে ফিরে আসার পর তার বাটে আর দুধই পাওয়া যাচ্ছে না । দিনের পর দিন এভাবেই চলছিল কিন্তু রাখাল কেশবদাস কিছুই বুঝতে পারছিল না । ঠিক কি ঘটছে তা ভালো করে দেখবার জন্য একদিন সে গাভীটির পিছু নিল । কিন্তু সেই একই ব্যাপার দেখল সে । গাভীটি তার সম্পূর্ণ দুধ সেই উঁই ঢিপিটির উপর বর্ষণ করে চলে এল । কিছুই বুঝতে না পেরে এইভাবে দুধ নষ্ট হওয়ার জন্য সে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল । একদিন ভগবান নৃসিংহদেব স্বপ্নে তাকে দর্শন দান করে , যে স্থানে গাভীটি দুধ বর্ষণ করছে , সেখানে তাকে একটি মন্দির নির্মাণ করে দিতে বললেন । ঐ গ্রামে একজন শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত বাস করতেন । সব শুনে তিনি কেশবদাসকে বললেন , স্বপ্নে ভগবান আবির্ভূত হওয়ার অর্থ হচ্ছে ভগবান চাইছেন সেখানে একটি মন্দির হোক এবং সেই মন্দিরে তিনি আরাধিত হতে চাইছেন ।

        তখন সেই রাখাল গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় সেই উঁইঢিপির স্থানে একটি মন্দির নির্মাণ করলেন । যে জায়গাটিতে গাভী প্রতিদিন দুধ বর্ষণ করত , সেই জায়গাটি পর্যবেক্ষণ করে , তারা সেখানে নারকেল ইত্যাদি পবিত্র দ্রব্য নিবেদন করে পূজা করে সেই জায়গাটিকে খনন করতে সেখানে এক পাথরের নরসিংহ মূর্তি পাওয়া গেল । তাই সকলে মিলে তারা সেই বিশেষ জায়গাটিতেই মন্দির নির্মাণ করলেন । সেই থেকে সেখানে শ্রীনৃসিংহদেব প্রতিদিনকার আচার অনুষ্ঠান সহ পূজিত হয়ে আসছেন । ভগবান নৃসিংহদেব যাকে স্বপ্নে দর্শন দিয়েছিলেন এবং যার উদ্যোগে মন্দির নির্মিত হল সেই রাখাল কেশবদাস যে গ্রামে বাস করতেন , সেই গ্রামের নাম তাঁর নামানুসারে রাখা হল কেশবদাসুপালেম ।

        কিন্তু একসময় কালের নিয়মে এই মন্দিরটিও জীর্ণ হয়ে গেল । সেই সময় , তার জাহাজকে সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে ভগবান নৃসিংহদেবের রক্ষা করার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ , নরেন্দ্র লক্ষ্মী নরসিংহ রাও নামে এক ধনী ব্যবসায়ী এই মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করেন । তিনি মন্দিরের জন্য অর্থ দান করেন এবং মন্দির পুনর্নির্মাণের জন্য কাঠ ক্রয় করবার জন্য তাঁর লোকেদের ভদ্রাচলমে প্রেরণ করেন । সেই লোকেরা ভালো দেখে কাঠের গুড়ি নির্বাচিত করে তা শ্রীনৃসিংহদেবের নামে চিহ্নিত করে , উপযুক্ত দামে ক্রয় করলেন । কিন্তু কাঠ ক্রয় করার পর তারা জানতে পারল যে এইসব বড় বড় কাঠের গুড়িগুলিকে অন্তর্বেদীতে নিয়ে যাবার মতো পরিবহণ ব্যবস্থা নেই । কেননা সেই বৎসর বৃষ্টিপাত প্রায় একেবারেই না হওয়ার জন্য গোদাবরীর জলস্তর এতটাই নীচু যে কাঠ নিয়ে যাওয়া যাবে না । তারা সেই সংবাদ ব্যবসায়ী নরসিংহ রাওয়ের কাছে পাঠালে , তিনি অন্তর্বেদীর সমুদ্র তটেই ক্রমান্বয়ে তিন দিন উপবাস করে । ভক্তিভরে ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা নিবেদন করে তপশ্চর্যা করলেন । কিন্তু নরসিংহ রাও ভগবানের কাছ থেকে কোন সাড়া পেলেন না । তখন ক্রোধে ও অভিমানে ভক্ত নরসিংহ রাও সমুদ্রের জলে দাঁড়িয়ে শ্রীনৃসিংহদেবের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন “ ঐ সিংহ এমনই ক্ষমতাহীন যে তাঁরই মন্দিরের জন্য ব্যবস্থা করা কাঠগুলোকে নিয়ে আসার কোন ব্যবস্থাই সে করতে পারছে না । ” সেইদিন রাত্রে এমন প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হল যে শ্রীনৃসিংহদেবের কাঠগুলো শ্রীশ্রীলক্ষ্মী - নৃসিংহ মন্দিরের মূল বিগ্রহ নামাঙ্কিত ভদ্রাচলম থেকে নদীপথে অন্তর্বেদীর ঘণ্টাঘাটে ভেসে চলে এল । এইভাবে তারপর মন্দির গড়ে উঠল ।

        সারা বৎসরের বিভিন্ন সময়ে অন্তর্বেদীর এই শ্রীলক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দিরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উৎসবাদি হয়ে থাকে । এইসব উৎসবাদির মধ্যে , জানুয়ারী ফেব্রুয়ারী মাস নাগাদ ভীষ্ম একাদশী তিথির দিন থেকে নয় দিন ব্যাপী ‘ শ্রীলক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী কল্যাণম ' নামে যে বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয় সেটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য । ঐ একাদশী তিথিতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত অন্তর্বেদীতে আগমন করে সাগর সঙ্গমে ও বশিষ্ঠ গোদাবরী নদীতে পুণ্য স্নান করেন । সেই সময় ভক্ত সমাগমে অন্তর্বেদীকে কলিযুগের বৈকুণ্ঠ বলে বোধ হয় ।

        কার্তিক মাসে এই মন্দিরে শ্রীনরসিংহ স্বামীর বিগ্রহকে কোনরকম অলঙ্কার শোভিত ছাড়া দর্শন করা যায় । সেই সময় তাঁর অঙ্গে কেবল চন্দন লেপন করা হয়।

        ফাল্গুন মাসে প্রতিদিন শ্রীলক্ষ্মী নরসিংহ স্বামীর বিগ্রহকে নিয়ে রথ শোভাযাত্রা করা হয় এবং দোল পূর্ণিমার দিন ভগবানের বিশেষ ' পঞ্চামৃত অভিষেকম ' অনুষ্ঠান হয়ে থাকে ।

        অন্তর্বেদী যাওয়ার জন্য নিকটবর্তী রেল ষ্টেশন হচ্ছে রাজামুন্দ্রি ও নর্সাপুর। তারপর সেখান থেকে বাস যোগে বা সড়ক পথে অন্তর্বেদী যাওয়া যেতে পারে। নর্সাপুর থেকে গোদাবরী নদীর জলপথেও লঞ্চে করে অন্তর্বেদী যাওয়া যায়। থাকবার জন্য নর্সাপুরে অনেক হোটেল রয়েছে । ' অন্তার্বেদী’র দেবস্থানম আশ্রমেও থাকতে পারেন ।

       

  • পরবর্তী তীর্থস্থান ৮ ) অহোবলম
  • * * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

    জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।