অনুবাদ : এখন আপনারা সকলে সেনাব্যূহের প্রবেশপথে নিজ নিজ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থিত হয়ে পিতামহ ভীষ্মকে সর্বতোভাবে সাহায্য প্রদান করুন।
তাৎপর্যঃ-
এখানে দুর্যোধন পান্ডব-পক্ষ ও কৌরব-পক্ষের সামরিক শক্তির তুলনা করেছে। পিতামহ বীরশ্রেষ্ঠ ভীষ্মদেবের রক্ষণাবেক্ষণাধীন অমিত শক্তিশালী এক সৈন্যবাহিনী ছিল দুর্যোধনের পক্ষে। অপর পক্ষে, পান্ডবদের সৈন্যবাহিনী ছিল সীমিত এবং তার সেনাপতি ছিলেন ভীমসেন, যাঁর শৌর্যবীর্য ও সৈন্য পরিচালনার ক্ষমতা পিতামহ ভীষ্মদেবের তুলনায় ছিল নিতান্তই নগণ্য। দুর্যোধন চিরকালই ভীমের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিল। কারণ বে জানত যে, যদি তাকে কোন দিন মরতে হয় তবে ভীমের হাতেই মরতে হবে। কিন্তু ভীষ্মের মতো বিচক্ষণ ও দুর্ধর্ষ যোদ্ধা তার পক্ষের সেনাপতি থাকায় সে নিশ্চিতভাবে ধরে নিয়েছিল জয় তার হবেই। দুর্যোধনের কথাতে বোঝা যাচ্ছে, যুদ্ধজয় সম্বন্ধে তার মনে কোনই সংশয় ছিল না।
ভীষ্মের শৌর্যবীর্যেও প্রশংসা করার পরে, দুর্যোধস বিবেচনা কে দেখল, অন্যেরা মওে করতে পারে, তাঁদের শৌর্যবীর্যের গুরুত্ব লাঘব করে হেয় করা হচ্ছে, তাই তার স্বভাবসুলভ কূটনৈতিক চাতুরীর সাহায্যে সেই পরিস্থিতির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সে উপরোক্তগুলি বলেছিল। এভাবে সে মনে করিয়ে দিল যে, ভীষ্মদেব যত বড় যোদ্ধা হন, তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেছেন এবং সব দিক থেকে তাই ভীষ্মদেবকে তাঁদের সকলেরই রক্ষা করা উচিত। যুদ্ধ করতে করতে যদি তিনি কোন এক দিকে চলে যান তাহলে শত্রæপক্ষ তার সুযোগ নিয়ে অন্য দিক থেকে আক্রমণ করতে পারে। তাই অন্য বীরপুঙ্গবেরা যাতে নিজ নিজ স্থানে অধিষ্ঠিত থেকে শত্রু সৈন্যকে বূহ্য ভেদ করতে না দেয়, তার গুরুত্ব সম্বন্ধে দ্রোণাচার্যকে দুর্যোধন মনে করিয়েছিল। দুর্যোধন স্পষ্টই অনুভব করেছিল যে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তার জয়লাভ সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করছে ভীষ্মদেবের উপর। দুর্যোধনের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে যুদ্ধে ভীষ্মদেব ও দ্রোণাচার্য তাঁকে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করবেন।