* ভগবান শ্রীকৃষ্ণ *
! ! ! ! ! ! ! ! ! !

ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ ।
অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্ব্বকারণকারণম্।।

Krishna vs Arjun @ Gita Bhogoban Krishner Picture Bhogoban Krishner Picture
*

পূর্বোক্ত বিবরণের পর -

      

সেইজন্য ভিত্তিহীন মায়াবাদী দর্শনের গোড়াতেই এক গভীর গলদ রয়েছে, যেখানে বলা হচ্ছে যে সেই পরম তত্ত্ববস্তু এই সমস্ত ৮৪ লক্ষ প্রজাতির জীব শরীর ধারণ করেছেন। যদি পরম তত্ত্ববস্তু মায়াগ্রাসে পতিত হয়ে এভাবে জরা-ব্যাধির-মৃত্যু-র মতো অতি ভীষণ দুর্দশা-ভোগে বাধ্য হন, তাহলে কি মায়া ভগবানের থেকে শক্তিশালী? ভগবান কখনই মায়াগ্রস্ত হতে পারেন না। যদি তিনি তা হতেন, তাহলে তাঁকে ভগবান বলা যেতে পারে না। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে এই প্রশ্নগুলি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা, যারা নিরাকারবাদ বা অদ্বৈতবাদ প্রচার করছে, অথবা যারা নিজেদেরকেই ভগবান বলে দাবী করছে। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবদগীতায় (৭/৪) বলেছেন যে তিনি কখনই মায়ার অধীন হন না। পক্ষান্তরে মায়াই বিনীতভাবে তাঁর সেবা করে চলেছেঃ ‘দৈবি হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দূরত্যয়া। মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে।। (ভ. গী.- ৭/১৪)’ “আমার এই দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং তা দুরতিক্রমনীয়া। কিন্তু যারা আমাতে প্রপত্তি করেন, তাঁরাই এই মায়া উত্তীর্ণ হতে পারেন।” এই শ্লোকের “মম মায়া”-র অর্থ হচ্ছে “আমার মায়াশক্তি”। অতএব শ্রীকৃষ্ণ এখানে দাবী করছেন যে মায়া শক্তি তাঁর অধীন এবং তাঁর আজ্ঞানুসারে তা কার্য করে। সুতরাং এই মায়াশক্তি ভগবানকে পরাভূত করবে, এমন কোনো সম্ভাবনাই নেই।


জীবসত্তার কেবল প্রত্যক্ষ সচেতনতা রয়েছে, শ্রীকৃষ্ণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় প্রকার সচেতনতা রয়েছে


      

আমরা এমন কত বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকি যা আমাদের প্রত্যক্ষণ বা ইন্দ্রিয়ানুভূতির পরিধির মধ্যে। কিছু বিষয় সম্বন্ধে আমাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সচেতনতা বা জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু আমরা এমনকি এটাও জানতে পারি না- এক টুকরো খাদ্য গলাধঃকরণ করার পর কি ঘটে, কিভাবে খাদ্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদানে ও রক্তে পরিণত হয়, কিভাবে তা শরীরের পুষ্টিসাধন করে, কিভাবে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুষ্ট হয়, কিভাবে সেগুলি কার করছে। আমাদের পরোক্ষ-অনুভবের বা প্রত্যক্ষণের ক্ষমতা নেই।


      

কিন্তু শ্রীমদভাগবতের প্রথম শ্লোকে (১/১/১) বলা হয়েছে, ‘জন্মাদস্য যতহন্বয়াদিতরতশ্চার্থেস্বভিজ্ঞঃ স্বরাট।’ ‘অন্বয়াৎ’ শব্দের অর্থ ‘প্রত্যক্ষভাবে’ এবং ‘ইতরতঃ’ শব্দের অর্থ- ‘পরোক্ষভাবে’। সুতরাং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে সর্বকাল ধরে ঘটমান সবকিছু সম্বন্ধে পূর্ণরূপে সচেতন। আর ‘স্বরাট’ শব্দের অর্থ হচ্ছে “পরম স্বাধীন”। শক্তি বা জ্ঞানের জন্য তিনি কারো উপর নির্ভরশীল নন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর শক্তিসমূহের মাধ্যমে সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।


      

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছেঃ ‘পরাস্য শক্তির্বিবিধৈব সূয়তে, স্বাভাবিকী জ্ঞান বল ক্রিয়া চ’ যার অর্থ ‘শ্রীকৃষ্ণের অসীম শতিরাজি রয়েছে, এবং তিনি তাঁর শক্তিরাজির মাধ্যমে ক্রিয়া করেন।’ শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাণ্ডের যে কোনো অংশের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োগ করতে পারেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আপনার শরীরে যদি কোথাও চুলকানি থাকে, তাহলে সেখানে চুলকানোর জন্য কোনো পরিকল্পনা রচনার প্রয়োজন হয় না। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই (‘স্বাভাবিকী’) আপনার হাত সেখানে চুলকাতে শুরু করে। ঠিক সেইরকম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন জড় জগৎ সৃষ্টির ইচ্ছা করেন, তখন এজন্য তাঁর কোনো নক্শা বা মডেল রচনা করার দরকার হয় না, তাঁকে ভাবতে হয় না কোথা থেকে উপাদানগুলি সংগ্রহ করতে হবে, কিভাবে সেগুলিকে একত্রে মিশ্রিত করতে হবে- ইত্যাদি, এবং পরে কিভাবে ঐ সৃষ্ট-জগতকে পালন করতে হবে। এসব কোন কিছু সম্বন্ধে তাঁর কোনো উৎকণ্ঠিত হওয়ার কোনো প্রয়োজনই হয় না- ‘স্বাভাবিকী’। সব কিছু স্বাভাবিক ভাবেই ঘটে। সবকিছুই তিনি সম্পন্ন করেন তাঁর শক্তিরাজির মাধ্যমে। তাঁর শক্তি স্বয়ংক্রিয়, স্বয়ংসিদ্ধ ও স্বতঃস্ফূর্ত। এই হচ্ছে পরমচৈতন্যের স্বরূপ।

পরবর্তী বিবরণ

*ভগবান শ্রীকৃষ্ণ*
! ! ! ! ! ! ! ! ! !

* * * Anupamasite-এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দমত যে কোন ধরনের লেখা পোস্ট করতে এখানে ক্লিক করুন।   আপনাদের পোস্ট করা লেখাগুলো এই লিংকে আছে, দেখতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ * * *

জ্ঞানই শক্তি ! তাই- আগে নিজে জানুন , শেয়ার করে প্রচারের মাধ্যমে অন্যকেও জানতে সাহায্য করুন।