ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরমেশ্বরতার প্রমাণ:-
শ্রীকৃষ্ণ : সকল জীবের পিতা
চলমান ও স্থির গ্রহ-নক্ষত্র-জীব সমাকুল এই সমগ্র মহাবিশ্ব শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন শক্তিরাজির কার্যের দ্বারা প্রকাশিত বা অভিব্যক্ত হয়৷ জড় জগতে আমরা বিভিন্ন জীবের সংগে বিভিন্ন সম্পর্ক গড়ে তুলি যেমন- পিতা, মাতা, পিতামহ, পিতামহী, মাতামহ, মাতামহী- ইত্যাদি, সকলেই স্বরূপতঃ শ্রীকৃষ্ণের অংশ৷ শ্রীকৃষ্ণ বলেনঃ
"পিতাহমস্য জগতো মাতা ধাতা পিতামহঃ ।"
(ভ.গী. ৯/১৭)-
আমিই এই জগতের পিতা, মাতা, বিধাতা (ধারণকর্তা) ও পিতামহ৷
এই ব্রহ্মাণ্ডের জীব সৃষ্টির সংক্ষিপ্ত বংশতত্ত্বগত ইতিহাস শ্রীকৃষ্ণ প্রদান করেছেন ভগবদ্ গীতার নিম্নোক্ত শ্লোকেঃ
মহর্ষয়ঃ সপ্ত পূর্বে চত্বারো মনবস্তথা ।
মদ্ ভাবা মানসা জাতা যেসাং লোক ইমাঃ প্রজাঃ ॥ (ভ.গী. ১০/৬)
সপ্ত মহর্ষি, তাঁদের পূর্বজাত সনকাদি চার কুমার ও চতুর্দশ মনু, সকলেই আমার মন থেকে উৎপন্ন হয়ে আমা হতে জন্মগ্রহণ করেছে এবং এই জগতের স্থাবর-জঙ্গম আদি সমস্ত প্রজা তাঁরাই সৃষ্টি করেছেন।
সর্বযোনিষু কৌন্তেয় মূর্তয়ঃ সম্ভবন্তি যাঃ ।
তাসাং ব্রহ্ম মহদ্ যোনিরহং বীজপ্রদঃ পিতা ॥ (ভ.গী. ১৪/৪)
হে কৌন্তেয় ! সকল যোনিতে যে সমস্ত মূর্তি প্রকাশিত হয়, ব্রহ্মরূপী যোনিই তাদের জননী-স্বরূপা এবং আমি তাদের বীজ প্রদানকারী পিতা।
--------------------------------------------------------
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ : সমস্ত অবতারগণের উৎস
ভগবান আমাদের মধ্যে অবতার-রূপে অবতীর্ণ হন৷ আর, তিনি অব তীর্ণ হবার পূর্বেই শাস্ত্রে সেই অবতারের উল্লেখ থাকে৷ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের পূর্বে বিভিন্ন শাস্ত্রে তার উল্লেখ ছিল৷ ঋগ্বেদে শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে উল্লেখ রয়েছে৷ ছান্দোগ্য উপনিষদে দেবকীনন্দন কৃষ্ণের উল্লেখ রয়েছে এবং এমন আরো বহু শাস্ত্রে রয়েছে৷
বুদ্ধদেবের আবির্ভাবের আড়াই হাজার বছর পূর্বেই ঐ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়েছিল (ভাঃ ১/৩/২৪)৷ অথর্ববেদের চৈতন্য উপনিষদ অংশে তাঁর আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল৷
শ্রীমদ্ভাগবতে
পরমেশ্বর ভগবানের ২২ জন অবতারের একটি তালিকা রয়েছে, কিন্তু সেখানে বলা হয়েছে যে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন আদিপুরুষ, যাঁর থেকে অন্য সকল অবতার প্রকাশিত হয় :
এতে চাংশুকলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়্ম্৷
ইন্দ্রারিব্যাকুলং লোকং মৃড়য়ন্তি যুগে যুগে ৷৷
(ভাঃ ১/৩/২৮)
"পূর্বোল্লিখিত এই সমস্ত অবতারেরা হচ্ছেন ভগবানের অংশ অথবা কলা অবতার, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং৷ য্খন নাস্তিকদের অত্যাচার বেড়ে যায়, তখন আস্তিকদের রক্ষা করার জন্য ভগবান এই ধরাধামে অবতীর্ণ হন৷"
সূত্রঃ ভগবদগীতার সারতত্ব ছয় পর্বের প্রাথমিক পাঠক্রম।