জীবাত্মার এই জড় বন্ধনে আবদ্ধ থাকাকে শাস্ত্রে
‘প-বর্গ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে, আর বন্ধনমুক্তিকে বলা হয়
‘অপবর্গ’। ব্যকরণের বর্ণমালা পাঁচটি বর্গে বিভক্ত; এর মধ্যে পঞ্চম বর্গটি হচ্ছে প; এই বর্গে পাঁচটি বর্ণ রয়েছেঃ প, ফ, ব, ভ, ম। জড়বন্ধনকালীন দুর্দশাকে পাঁচটি অক্ষরের প্রতীকে ব্যক্ত করা হয়েছে; তা এইরকমঃ
প = পরিশ্রমঃ এই জড় জগতে প্রত্যেক জীব সত্তাকে ‘বেঁচে’ থাকার জন্য অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। একে বলা হয় ‘জীবন সংগ্রাম’, অস্তিত্ব রক্ষার কঠোর লড়াই।
ফ = ফেনাঃ যখন একটি ঘোড়াকে কঠোর পরিশ্রম করানো হয়, যেমন একটি ভারী মালবোঝাই গাড়ী টানানো- তখন তার মুখের দু’পাশ দিয়ে ফেনা বেরিয়ে আসে। ঠিক তেমনি আমাদেরকেও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়; সরাসরি দেখা না গেলেও ঐ একইভাবে যেন মুখে ফেনা বেরিয়ে আসে- অর্থাৎ শেষ শক্তি ব্যয় করে পরিশ্রম করে যেতে হয়। প্রত্যেকেই ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রাত-দিন জ্ঞান না করে পরিশ্রম করে চলে।
ব = ব্যর্থতাঃ আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই জগতে আমাদের সকল আশা ব্যর্থ হয়, সকল প্রয়াস বিফল হয়।
ভ = ভয়ঃ জড় জাগতিক জীবনে আমরা সর্বদাই নানা ভয়, উৎকণ্ঠা, শঙ্কার দাবানলে দগ্ধীভূত হতে থাকি।
ম = মৃত্যুঃ আমাদের সমস্ত আশা, মমত্বলালিত সুখস্বপ্নের অন্তিম সমাধি রচনা করে অপ্রতিরোধ্য, অনিবার্য মৃত্যু। জন্মের পর জন্ম – অন্তহীন কাল ধরে জড় অস্তিত্বের দুর্দশাভোগ থেকে, এই ‘প-বর্গ’ থেকে বেরিয়ে আসার নিশ্চিত উপায় হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত অনুশীলন। অন্য কথায়, কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করলে আমরা ‘অপবর্গ’ লাভ করি, যার অর্থ হচ্ছে এই প-বর্গ হতে অব্যাহতি, অর্থাৎ আমরা
এমন স্তরে উন্নীত হই, সেখানে এই জড় অস্তিত্ব-জাত কঠোর সংগ্রাম, ব্যর্থতা, ভয় বা মৃত্যু – কোনটিরই অস্তিত্ব নেই।